তাজা খবরমহানগরসম্পাদকের পছন্দ

পূর্নবাসন না করে উচ্ছেদ না করার দাবীতে কুমুদিনীর শ্রমিকদের সংবাদ সম্মেলন

খবর নারায়ণগঞ্জ.কম :
কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট এর অধীন বেঙ্গল (বিডি) লিঃ জুট প্রেস কোম্পানীতে কর্মরত শ্রমিকগণকে শ্রম আইন অনুযায়ী প্রাণ্য পাওনা পরিশোধ না করে বাসস্থান হতে উচ্ছেদের ঘোষনার প্রতিবাদে এবং পূর্নবাসন ছাড়া শ্রমিক পরিবারকে উচ্ছেদ না করার দাবিতে কুমুদিনি বাগানে বসবাসরত শ্রমিক ও শ্রমিক পরিবারের সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত।
শনিবার সকাল ১১ টায় নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মোঃ নাসির বলেন, কুমুদিনী শ্রমিকগণ দীর্ঘ ৪০/৫০ বছর যাবৎ এবং স্বাধীনতার পূর্ব থেকে কম-বেশি বিভিন্ন মেয়াদে কুমুদিনী ওয়েল ফেয়ার ট্রাস্টের অর্ন্তভূক্ত বেঙ্গল (বিডি) জুট প্রেস কারখানায় চাকুরী করে আসছি। আইনের নির্দেশনা অনুযায়ী কোন শ্রমিকের চাকুরীর অবসান করিলে প্রাপ্য পাওনাদি পরিশোধ করা কোম্পানী বা প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব। এছাড়াও বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬ আইনের ৩২ ধারা এর উপধারা (২) এ উল্লেখিত্ত আছে, শ্রমিকের পাওনা পরিশোধ না করে কোন শ্রমিককে বাসস্থান হতে উচ্ছেদ করা যাইবে না।
এমতবস্থায় ট্রাস্টের মালিকানাধীন শিল্প কারখানার কর্মকর্তাগণ কোন প্রকার লিখিত নোটিশ না দিয়ে আইন বর্হিভুতভাবে গত ১৫/০৩/২০২১ ইং তারিখে আমাদের বাসা/ঘরের দরজার সামনে এসে “লাল রংয়ের দাগের ক্রস চিহ্ন দিয়া বলে ৭ দিনের মধ্য বাসস্থান খালি করা না হলে বুলডোজার দিয়ে ভাঙ্গিয়া উচ্ছেদ করা হবে বলে ঘোষনা দেয়। কর্তৃপক্ষ আরও জানায় তোমাদের বাসস্থানের জায়গাতে ক্যান্সার হাসপাতাল/নার্সিং হোম নির্মাণ করা হইবে। বাসা না ছাড়লে আমাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার হুমকি দেয়।
কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বে-আইনীভাবে গত ১৫/০৩/২০২১ তারিখে শ্রমিকগনের বাসস্থান বা ঘরে লাল ক্রস চিহ্ন দিয়া বাসস্থান হইতে “উচ্ছেদ” ঘোষনার পর হইতে আমরা শিশু সন্তান সহ বৃদ্ধ মা-বাবা পরিবার-পরিজন নিয়া আতংকজনক অবস্থায় দিনাতিপাত করছি। কুমুদিনী ওয়েল ফেয়ার ট্রাস্ট একটি জনকল্যান মূলক ট্রাষ্ট্রি প্রতিষ্ঠান যা ট্রাস্ট আইন দ্বারা পরিচালিত। তাই কর্মরত শ্রমিকগণের অকল্যাণ বা কোন জনগণের অকল্যাণ সৃষ্টি হতে পারে এমন কোন অকল্যাণ মূলক কাজ অত্র ট্রাস্ট্রি করতে পারেনা। উল্লেখ করা যাচ্ছে যে, আমাদের শ্রমিকগণের পূর্ব পুরুষগণ পিতা এবং পিতামহগণ ৬০/৭০ বছর যাবৎ অত্র শিল্প-কারখানায় কাজ ও উৎপাদন করে প্রতিষ্ঠানকে উন্নতি ও অর্থনৈতিকভাবে বিপুল অংকের লাভজনক প্রতিষ্ঠানে রুপান্তর করেছেন। আমরা বর্তমান জুট প্রেস এ কর্মরত আছি যেহেতু কর্তৃপক্ষ বর্তমানে আমাদের কর্মস্থান হইতে উচ্ছেদ করিতে ঘোষনা দিয়েছে সেহেতু সবার আগে বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬ অনুসারে আমাদের প্রাপ্য পাওনাদি হিসাব ও পরিশোধ করার জন্য অস্ত্র কোম্পানী বা প্রতিষ্ঠানের আইনগতভাবে একান্ত দায়িত্ব।
লিখিত বক্তব্যে তিনি আরো বলেন, বর্তমান বিশ্বব্যাপি মরনব্যাধি করোনা ভাইরাসে নিজ-নিজ ঘর হতে বের হওয়া জীবনের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। করোনা পরিস্থিতি উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত পরিবার পরিজন নিয়া হাজার হাজার লোকজন অন্যত্র স্থানান্তর করা সম্ভব নয়। কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাষ্ট্রের বেঙ্গল (বিডি) লিঃ শিল্প কারখানার স্বল্প বেতন/মজুরী দিয়া কোনভাবে আমাদের সংসার চলছে, আমরা অত্যন্ত গরীব। বর্তমানে আমাদের কোন সঞ্চয় বা জায়গা জমি বা মাথা গোজার মত কোন ঠাঁই নাই এবং যাওয়ার কোন জায়গাও নাই ট্রাস্টি কর্তৃপক্ষ বা শিল্প কারখানা কর্তৃপক্ষ এমতবস্থায় আমাদের পরিবার পরিজনকে বাসস্থান থেকে উচ্ছেদ করিলে আমরা মৃত্যুমুখে পতিত হবো। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ১০ লাখ রহিঙ্গাদের বাংলাদেশ আশ্রয় ও ঠাঁই দিয়ে বিশ্বে মাদার অব হিউমিনিটি উপাধি অর্জন করেছেন অথচ আমরা সেই পাট শ্রমিক যারা ১৯৭১ সালে নৌকার বিজয় ও স্বাধীনতার জন্য প্রাণ দিয়েছি। তাহলে আমাদের একটু মাথা গোজার ঠাঁই কেন হবে না কেন ? তাই শ্রম আইন অনুসারে আমাদের ন্যায্য প্রাপ্য পাওনা পরিশোধ পূর্বক করোনা মহামারীর উন্নতি না পর্যন্ত আমাদের শ্রমিক পরিবারকে বাসস্থান হইতে উচ্ছেদ না করা এবং যেহেতু কুমুদিনী ওয়েল ফেয়ার ট্রাস্ট বিশাল ভূ-সম্পত্তির অধিকারী বা মালিক, মানবিক কারনে বশতঃ শ্রমিকগণকে পূর্নবাসন না করে বাসস্থান থেকে উচ্ছেদ না করার জন্যও আমাদের পরিবার ও পরিজনের পক্ষ হইতে সদয় প্রার্থনা করা হলো।
এসময় শ্রমিক নেতা এড. মাহবুবুর রহমান ইসমাঈল সহ কুমুদিনী ওয়েল ফেয়ার এর শ্রমিকগণ ও তাদের পরিবারবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলন শেষে শ্রমিকগণ কাফনের কাপড় গায়ে জড়িয়ে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে নগরীর প্রধান সড়ক প্রদিক্ষন করে কুমুদিনী বাগানে গিয়ে শেষ করে।

Related Articles

Back to top button